বিগত সাড়ে ১৫ বছর আওয়ামী লীগের সঙ্গে সরকারে-সংসদে বিরোধী দলের আসনে থাকা জাতীয় পার্টি (জাপা) সব কূলই হারাচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে প্রথম দফা সংলাপে অংশ নিলেও পরের সংলাপে ডাক পায়নি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টি। জাপাকে ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ আখ্যা দিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা আপত্তি জানিয়েছেন। ফলে তাদের আর আমন্ত্রণ জানাননি নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। তবে সব কিছু ছাপিয়ে কূলহারা ‘জাপা’ রাজনীতি ময়দানে টিকে থাকতে নতুন পরিকল্পনা করছে। এরই মধ্যে গত রোববার রাতে জাপার অতিরিক্ত মহাসচিব পর্যায়ের এক বৈঠক করেছেন দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদের। ওই বৈঠকে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যতই ঘোলাটে হোক না কেন, কিংবা হামলা-মামলার যত ভয়-ভীতি আসুক না কেন, তৃণমূল পর্যায়ে দলকে একতাবদ্ধ করে রাজনীতির ময়দানে নতুনভাবে আত্মপ্রকাশ করতে চাইছে জাতীয় পার্টি (জাপা)। চলতি এপ্রিল মাসের শেষ দিকে দেশব্যাপী গণসংযোগ কর্মসূচি জোরদার করার পরিকল্পনা নিচ্ছে দলটি। তরুণ ভোটারদের আকৃষ্ট করতে সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড তুলে ধরে পুনরায় প্রচারে জোর দিচ্ছেন জাপার শীর্ষ নেতারা। দলটির বেশ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতার সঙ্গে আলাপকালে এসব তথ্য জানা গেছে।
বৈঠকে জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, ?এখন যে পরিস্থিতি সেটা হলো ‘ডু অর ডাই। এখন বাঁচতে হলে তো আমাদের ফাইট করতে হবে। অন্য দলে রাজনীতি করতে স্বচ্ছন্দ্যবোধ করছেন না, এমন অনেক মানুষ আমাদের দলে এসে যুক্ত হচ্ছেন। তারা কিন্তু ভয় করছেন না। তিনি বলেন, ?তৃণমূল পর্যায়ের অনেক নেতা আছেন যারা বিভিন্ন হুমকি উপেক্ষা করে অনুষ্ঠান করছেন। কেউ ধমক দিলে বা হামলা-মামলার ভয় দেখালে তারা ভীত-সন্ত্রস্ত না হয়ে অনুষ্ঠান করে যাচ্ছেন। সাংগঠনিক কার্যক্রম আমরা কখনো বন্ধ রাখিনি। কিন্তু আমাদের লোকজন সব প্রোগ্রাম করে যাচ্ছেন। কোথাও কেউ থেমে নেই। গত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জোটসঙ্গী হয়ে প্রধান বিরোধী দলের আসনে বসা জাতীয় পার্টিকে নিয়ে এখন বিস্তর আলোচনা হচ্ছে রাজনৈতিক মহলে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের অভিযোগ, জাতীয় পার্টির সমর্থন পেয়েই ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা আরও কঠোরভাবে কায়েম করতে পেরেছে আওয়ামী লীগ। জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীদের ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে রাজধানীর কাকরাইলে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও তার স্ত্রী শেরীফা কাদের, মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নুসহ জাপার সাবেক সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধেও একাধিক মামলা দায়ের করা হয়েছে। জাপার একজন প্রভাবশালী নেতাসহ অনেকে কারাগারেও রয়েছেন। তবে জি এম কাদের নির্বাচনের আগেও শেখ হাসিনা সরকারের সমালোচনা করেছেন। আর নির্বাচনের পরে বলেছেন, শেখ হাসিনা নানা চাপ দিয়ে জাপাকে নির্বাচনে যেতে বাধ্য করেছে। অন্তর্বর্তী সরকার জাতীয় পার্টির সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করছে বলে একাধিক সভায় মন্তব্য করেছেন জি এম কাদের। তার ভাষ্যে, ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে তিনি অকুণ্ঠ সমর্থন জুগিয়ে গেলেও ঢালাওভাবে তাদের ফ্যাসিবাদের দোসর বলা হচ্ছে। রাজনৈতিক-সামাজিক বৈষম্য বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশে আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করছেন তিনি। এমন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে জাতীয় পার্টির রাজনৈতিক কার্যক্রম দৃশ্যমান হচ্ছে না। আওয়ামী লীগপন্থি অন্য রাজনৈতিক দলের মতো জাতীয় পার্টিও ঝিমিয়ে পড়ল কি না এমন আলোচনা ছড়িয়েছে। তবে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিবেচনায় নিয়ে জাতীয় পার্টি রাজনীতির মাঠে পুনরায় সক্রিয় হয়ে উঠতে চাইছে। ভঙ্গুর তৃণমূলকে গুছিয়ে নিয়ে নির্বাচনের ট্রেনে উঠতে চাইছেন দলটির নেতা-কর্মীরা। নির্বাচন সামনে রেখে দল গোছানো হচ্ছে জানিয়ে জি এম কাদের বলেন, আমাদের অনেক এমপি, অনেক সিনিয়র নেতা এখন পার্টি অফিসে আসছেন না। তারা গা ঢাকা দিয়েছেন। তাই আমরা ঠিক করেছি, দলের নেতা-কর্মীরা কে কোথায় আছেন তা নিয়ে আলোচনা করব। তাই ১৯ এপ্রিল বর্ধিত সভা ডাকা হয়েছে। এ সভার পর আমরা রাজনৈতিক সংগঠন গোছানোর কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করব। সামনে আমাদের কর্মসূচি কী হবে সেই ঘোষণা দেব। নির্বাচন করতে গেলে তো দলের সাংগঠনিক শক্তির প্রয়োজন। তাই আমরা দেশজুড়ে কর্মসূচি দেব। এককথায় জাতীয় পার্টি নতুনভাবে রাজনীতি শুরু করবে। সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড বিস্তৃত পরিসরে প্রচারের পরিকল্পনা রয়েছে জাতীয় পার্টির। জি এম কাদের বলেন, এরশাদ সাহেবের সময় দেশে সুশাসন ছিল। যদি কোনো দিন আমরা ক্ষমতায় আসতে পারি, তাহলে আমরা আবার সুশাসন দেব। এরশাদের শাসনামলে আমরা কোনো গুপ্তহত্যা করিনি, কোনো চাঁদাবাজি করিনি, সাধারণ মানুষকে অত্যাচার করিনি। সব দলের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে কাজ করেছি। আমরা আশাবাদী, সঠিক নির্বাচন হলে আমরা ভালো করতে পারব। জাতীয় পার্টির জনসমর্থন দিন দিন বাড়ছে দাবি করে দলটির চেয়ারম্যান বলেন, সাধারণ মানুষ বুঝতে পারছেন, তাদের পক্ষের দল আর ভয়েস হিসেবে আমরা আছি। এটা আমাদের জন্য পজিটিভ সাইন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরে রওশন এরশাদের নেতৃত্বে ষষ্ঠ দফায় ভাঙে জাতীয় পার্টি। তার দলে যোগ দেন জাপার প্রভাবশালী চার নেতা। পরে রওশন এরশাদ অনুসারীরা জাতীয় পার্টির নিবন্ধন স্বত্ব নিজেদের করে নিতে শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে নানা দেনদরবার করেছেন বলে মন্তব্য করেন জি এম কাদের। এখন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিপাকে থাকা সেই নেতা-কর্মীদের অনেকে মূল দলে ফিরতে চান বলে জানান জি এম কাদের। তিনি বলেন, কেউ ব্যক্তিগতভাবে দোষ স্বীকার করলে আমরা তখন বিবেচনা করব যে তিনি দলের সঙ্গে কখনো বেঈমানি করবেন কি না। যদি এমন কিছু না হয় তবে আমরা বিবেচনা করব। কিন্তু যদি দেখি ব্ল্যাকমেইল করতে আসেন, ছাত্র-সমন্বয়কদের সঙ্গে লাইন দিয়ে আমাদের রেজিস্ট্রেশন নিজের করে নিতে চান, এমন লোককে কোনোভাবেই দলে নেয়া হবে না।
তবে দলটির নেতারা জানিয়েছেন, জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার এবং সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানোর মাধ্যমে নতুন বছরে এগিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাপার কয়েকজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সংলাপে ডাক না পাওয়ায় দলের হাইকমান্ড চিন্তিত নয়। তবে জাপার মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, যেকোনো সময় সংলাপে ডাকা হলে তারা অংশ নেবেন। এখন তারা দলকে ঢেলে সাজাতে চান। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টিকে কেউ দুর্বল ভাবলে ভুল করবে। তিনি আরও বলেন, জাতীয় পার্টি কাউকে লিখিত দিয়ে রাজনীতি করে না। আমরা কারও এজেন্ট নই, কারও পক্ষ করা আমাদের রাজনীতি নয়। আমরা আমাদের রাজনীতি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। তৃণমূলে এখনো জাতীয় পার্টির একটা গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে এবং দেশের বেশিরভাগ মানুষ জাতীয় পার্টিতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় দেখতে চায় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এ বিষয়ে জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া জানান, রাজধানীর ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে আগামী ১৯ এপ্রিল বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হবে। ওই সভায় প্রতিটি জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকগণ উপস্থিত থাকবেন। তারা আগামী ত্রয়োদ্বশ নির্বাচন ও সাংগঠন বিষয়ে নানা মতামত তুলে ধরবেন। তাদের মতামতের ভিত্তিতে সামনের দিনগুলোতে জাতীয় পার্টিকে আরও শক্তিশালী করা হবে। তিনি বলেন, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সম্মেলনও সম্পন্ন করার পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করার ওপর জোর দেয়া হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, সামনের দিনগুলোতে জাতীয় পার্টিকে পুনর্গঠন করে জনগণের আস্থা অর্জনের পথে এগিয়ে যেতে চায়।
প্রসঙ্গত, ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তারকে হটিয়ে সামরিক শাসন জারি করে ক্ষমতায় আসেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। ১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠা করেন জাতীয় পার্টি। ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালের নির্বাচনে বিশাল জয় পায় দলটি। যদিও দুটি নির্বাচনই ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নিলেও ১৯৮৮ সালের নির্বাচন সব বড় দল বর্জন করে। ১৯৯০ সালের ডিসেম্বরে পতন হয় এরশাদের। তিন মাস পরের নির্বাচনে জাপা ২২১ আসনে প্রার্থী দিয়ে জয় পায় ৩৫ আসনে। নব্বই-পরবর্তী ভোটের রাজনীতিতে এটিই লাঙ্গলের সেরা সাফল্য। ওই নির্বাচনে ১১ দশমিক ৯ শতাংশ ভোট পেয়ে বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের ইসলামীর পর চতুর্থ স্থানে ছিল জাপা। ১৯৯৬ সালের জুনে অনুষ্ঠিত সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ১৬ দশমিক ২ শতাংশ ভোট পাওয়া লাঙ্গল পায় ৩২ আসন। সরকার গঠনে আওয়ামী লীগকে সমর্থন দেয় জাপা। পরের বছরের জানুয়ারিতে জামিনে মুক্তি পান এরশাদ। এর আগে প্রায় ছয় বছর টানা কারাগারে ছিলেন সাবেক এই রাষ্ট্রপতি। তিনি জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর থেকেই শুরু হয় জাপার ক্ষণে ক্ষণে পক্ষ বদল। ১৯৯৯ সালে আওয়ামী লীগকে ছেড়ে বিএনপি জোটে যায় জাপা। পরের বছর জোট ছাড়েন এরশাদ। ২০০১ সালের নির্বাচনে ১৪ আসন এবং ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ ভোট পায় লাঙ্গল। নীলফামারী-৩ বাদে বাকি ১৩টি আসন ছিল বৃহত্তর রংপুরের।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এর পর আর ভোট বাড়েনি লাঙ্গলের। ২০০৬ সালে ফের আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করেন এরশাদ। ২০০৮ সালের নির্বাচনে ৪৯ আসনে প্রার্থী দেয় দলটি। এর মধ্যে যে ২৯ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিল না, তার ২৭টিতে জয় পায় লাঙ্গল। বাকি ২০ আসনের একটিতে জিততে পারেনি। রংপুরের তিনটি বাদে বাকি ১৭টি আসনে লাঙ্গলের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। এ পরিসংখ্যান বলছে, আওয়ামী লীগের ওপর ভর করে ২০০৮ সালের নির্বাচনে সফলতা পায় জাপা। বিএনপিবিহীন ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন এরশাদ বর্জন করলেও রওশন এরশাদের নেতৃত্বে জাপার একাংশ ভোটে যায়। ওই নির্বাচনে ২২টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন লাঙ্গলের প্রার্থীরা। বাকি ৬৬ আসনের ১২টিতে জয় পায় জাপা। ওই নির্বাচনে জাপা যে ৩৪ আসনে জয় পেয়েছিল, তার ৩৩টিতে নৌকার প্রার্থী ছিলেন না। আওয়ামী লীগ ৪২টি আসন ছাড়লেও ৯টিতে স্বতন্ত্র, জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টির মতো ছোট দলের বিপক্ষে হেরে যায় লাঙ্গল। শুধু ঢাকা-১ আসনে আওয়ামী লীগকে হারিয়েছিল জাপা। গত ২৩ বছরে জাতীয় নির্বাচনে নৌকাকে হারানোর একমাত্র উদাহরণ লাঙ্গলের। সংসদে ৩৪ আসন থাকলেও ২০১৪ সালের উপজেলা, ২০১৫ সালের পৌরসভা এবং ২০১৬ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভরাডুবি হয় জাতীয় পার্টির। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীকের ব্যবহার শুরুর পর জাতীয় পার্টির ভোটের অঙ্কে চরমোনাইর পীরের ইসলামী আন্দোলনের চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে। ২০২১ সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে লাঙ্গল সারাদেশে ১ শতাংশের কিছু বেশি ভোট পেয়েছে। যদিও ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে অভাবনীয় ফল করে বিএনপির প্রায় চারগুণ ২২টি আসন পেয়েছিল। ওই নির্বাচনে জাপাকে ২৬ আসন ছেড়েছিল আওয়ামী লীগ। এর ২১টি পায় লাঙ্গল। বরিশাল-৩ আসনে ওয়ার্কার্স পার্টি নৌকার প্রার্থীকে হারায়। বাকি ১৫০ আসনে ঢাকা-১ বাদে কোথাও দ্বিতীয় স্থানেও ছিল না লাঙ্গল। সব আসনে জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। প্রার্থিতা বাতিল হওয়া যে ১৭টি আসনে বিএনপি জোটের প্রার্থিতা বাতিল হয়েছিল, সেখানেও লাঙ্গল দ্বিতীয় স্থানে থাকতে পারেনি। জাতীয় পার্টির সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম মসীহ বলেছেন, ভুল রাজনীতির কারণে দলটি শেষ হয়ে গেছে। তবে একাদশ জাতীয় সংসদে ৩৬টি উপনির্বাচন হয়েছে। এর দুটিতে জয় পেয়েছে জাপা। এ দুটি আসনে নৌকার প্রার্থী ছিল না। অন্য কোথাও জামানত বাঁচেনি লাঙ্গলের। ২০২১ এবং ২০২২ সালে আটটি উপনির্বাচনে লাঙ্গলের প্রার্থীরা দলীয় মনোনয়ন নিয়েও নির্বাচন থেকে পরবর্তী সময়ে সরে যান। শুধু তাই নয়, জাপার দুর্গখ্যাত রংপুর সিটি করপোরেশনে জয় পেলেও গত বছর অনুষ্ঠিত পাঁচ সিটি করপোরেশনের কোথাও তারা দাঁড়াতে পারেনি। গাজীপুরে সাত প্রার্থীর মধ্যে ষষ্ঠ হয় লাঙ্গল, রাজশাহীতে হয় চারজনে চতুর্থ। জাকের পার্টির গোলাপ ফুলের চেয়েও কম ভোট পায় লাঙ্গল। বরিশালে ছয় প্রার্থীর মধ্যে পঞ্চম হয়। খুলনায় ইসলামী আন্দোলনের প্রায় চার ভাগের এক ভাগ ১৭ হাজার ভোট পায় লাঙ্গল। ইসলামী আন্দোলনের বর্জনের পর সিলেটে ৫০ হাজার ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হয়। রংপুর জেলার বাইরে এটিই গত এক দশকে জাপার সেরা সাফল্য। তবুও রংপুরে জাপার দশা বেহাল। কোনো উপজেলা ও পৌরসভায় জাপার জয় নেই। ইউনিয়ন পরিষদেও জিততে পারছে না। তবে ২০১৮ সালের উপনির্বাচনে গাইবান্ধা-১ ও কুড়িগ্রাম-৩ আসনের উপনির্বাচনে নৌকাকে হারাতে পেরেছিল লাঙ্গল। গত পাঁচ বছরে নৌকার বিরুদ্ধে আর কোথাও জয়ের নজির নেই লাঙ্গলের। ১৯৯১ সালে বৃহত্তর রংপুরের ২২ আসনের ১৮টি এবং ১৯৯৬ সালের ২২টি পেয়েছিল জাপা। এখন কেন বেহাল দশা? প্রশ্নে দলটির সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য দেলোয়ার হোসেন বলেন, যখন যে নেতৃত্বে ছিলেন, শুধু নিজের স্বার্থের কথা চিন্তা করেছেন। যেনতেনভাবে নিজেরা এমপি হতে চেয়েছেন, এভাবে দলটি নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। ২০১৪ সাল থেকে জাতীয় পার্টি সংসদে প্রধান বিরোধী দল। কিন্তু গত ১০ বছরে রাজপথে কোনো কর্মসূচি নেই। গত সেপ্টেম্বরে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও এমপিদের যৌথসভায় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও দুর্নীতির প্রতিবাদে কর্মসূচি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েও পিছিয়ে আসে। তবে কর্মসূচি করার মতো সাংগঠনিক সামর্থ্য নেই। সে কারণেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে হয়েছিল।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

* হামলা-মামলার ভয়-ভীতি উপেক্ষা করে তৃণমূলকে ঐক্যবদ্ধ করার উদ্যোগ * জাতীয় পাটিকে কেউ দুর্বল ভাবলে ভুল করবে: মুজিবুল হক চুন্নু * জেলা-উপজেলা পর্যায়ের সম্মেলন সম্পন্ন করার পরিকল্পনা রয়েছে
রাজনীতির ময়দানে টিকে থাকতে জাপা’র পরিকল্পনা
- আপলোড সময় : ০৭-০৪-২০২৫ ১০:৫৫:৪৯ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৮-০৪-২০২৫ ১২:২৮:১১ পূর্বাহ্ন


কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ